1. admin@am24newstv.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খুলনায় খেজুর রস 

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক..

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে খুলনায় খেজুর রস ও খেজুরের গুড়। জেলার সদর, বটিয়াঘাটা, দাকোপ সহ উপজেলার মাঠে আগের মত খেজুর গাছে আর দেখা মিলছে না। এখন আর রসের হাঁড়ি নিয়ে গাছিদের তেমন গ্রামের মেঠো পথে দেখা যায় না। শীত মানেই খেজুর রস। নানা ধরনের মুখরোচক পিঠা ও পায়েস তৈরিতে খেজুর রসের বিকল্প নেই। শীতকাল এলেই হরেক রকমের পিঠার আয়োজন হয়, কিন্তু খেজুর গাছে বিলুপ্তিতে রস এখন আর তেমন একটা মিলছে না। ফলে নানা রকমের পিঠার বাহার চোখে খুব কম পড়ে। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ, খেজুরের রস ও গুড় এবং সংগ্রহের পেশা। এক সময় খুলনা সদর, আশপাশের এলাকার মাঠে- বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দুই ধারে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। আগের দিনগুলোতে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে প্রতি ঘরে ঘরে দেখা যেত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতা।
কিন্তু বর্তমানে খুব কম দেখা যায় এ পেশার কারিগরদের। রস সংগ্রহ করে ঢেউটিনের তাফালে বড় আকারের চুলায় জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হতো খেজুরের গুড়, পাটালি গুড়সহ নানা ধরনের গুড়। এখন এসব শুধুই স্মৃতি। এখন কিছু কিছু খেজুর গাছ থাকলেও তা সারাক্ষণ পরিচর্যা করাটা যেন কাজ হিসাবে মনে করছেন না। দাকোপ উপজেলার কচা গ্রামের ১০১ বছরের বৃদ্ধ মহিলা নেতো বুড়ি বলেন, বাবা আমরা আগে এক টাকা দিয়ে এক হাঁড়ি খেজুরের রস কিনেছি। এ রস দিয়ে খেজুর গুড়, ভাপা পিঠার আয়োজনে এক সময় উৎসব চলতো। এখন এ কথা যেন কল্প কাহিনী। নাতি নাতনি, ঝি-বউদের কাছে বললেও ওরা এটাকে গল্প মনে করছে। এখন প্রতি হাঁড়ি রসের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা তাও সঠিক রস বা গুড় কোনটাই আর পাওয়া যায় না। শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ কেটে রসের সন্ধানে গাছিরা তৎপর হয়ে ওঠে। তার আগে খেজুর গাছের কথা কারোর মনেই পড়ে না। গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় চাহিদা মেটাতে বাজুয়ার হরোসিত গাছি জানান, আমাদের ১২ টার মত খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর বাগান থেকে প্রতিদিন ৬-৭ হাঁড়ি খেজুর রস আহরণ করে থাকি। প্রতি হাড়ি রস ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। এলাকাবাসী বলেন বাইরের থেকে অনেক বেশি টাকা মজুরি দিয়ে গাছি এনে গাছ কাটাতে হয়। গুড় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি করি। খেজুরের গুড় দিয়ে সুস্বাদু পিঠা হয়। গ্রাম বাংলার খেজুর রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ না কেটে যেন বৃদ্ধি করা হয় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় এ রসের চাহিদা মেটাতে দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, খেজুর রস ও গুড় এ দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। গুড় মুড়ি খেতে খেজুর রসের বিকল্প নেই। এখনো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক খেজুর গাছ, সেগুলোকে পরিচর্যা করা প্রয়োজন। গ্রাম বাংলার উৎসব ফেরাতে আমাদেরকে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি খেজুর গাছের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাক্তার সুদীপ্ত বালা বলেন, বাজারে যেসকল গুড় পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে বেশিরভাগ গুড়ই ভেজাল। ভেজাল গুড়গুলো যে সকল কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয় এগুলো মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে খেজুর গাছ ও গুড়ের প্রকৃত মান ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করনে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025